দখিনের খবর ডেক্স ॥ মোকাম জুড়ে সারি সারি ধানের বস্তা। মিলমালিক ও আড়তদাররা ছুটছেন সে ধান কিনতে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধান নিয়ে বিক্রেতারাও দরদাম করে ধান বিক্রি করছেন। অন্যদিকে মোকাম থেকে ক্রয় করা ধান খালাস করতে ব্যস্ত শ্রমিকরা।এই ব্যস্ততার চিত্র দেশের পূর্বাঞ্চলের মেঘনা নদীর তীরে থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ধানের মোকামের। চলতি মৌসুমে ধানের উৎপাদন ভাল হওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষক ও ধান বিক্রেতারা এই মোকামে এসে ভিড় করছেন। প্রতিদিন অন্তত ৫০ হাজার থেকে এক লাখ মণ ধান এই মোকামে নিয়ে আসা হচ্ছে। বেচা বিক্রি এমন ধুম থাকলেও ধানের সঠিক মূল্য পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা তালগোল। একদিকে কৃষক ও ধান বিক্রেতারা বলছেন, সিন্ডিকেটের কারণে তারা ধানের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে মিলমালিকদের দাবি অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ধানের ভাল দাম পাচ্ছেন কৃষকরা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মেঘনা নদীর চারপাশ ঘিরে বাহারি রঙের ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে ঘাটে ধানের সমারোহ ঘটছে। প্রতি নৌকাতেই ভরা ধানের বস্তা। মোকাম জুড়ে সোনালি ধানের মৌ মৌ গন্ধ। কিন্তু ধানের সঠিক মূল্য নিয়ে কৃষক ও ধান বিক্রেতাদের মধ্যে হতাশা। মোকামে কথা হয় ধান বিক্রেতা শাহজাহান মিয়ার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, নৌকায় করে কিশোরগঞ্জ থেকে এক হাজার মণ ধান নিয়ে এসেছি। মোটা ধান প্রতি মণে সাড়ে পাঁচশ টাকা দর পাচ্ছি। আর চিকন ধান প্রতি মণে ছয়শ টাকা পাচ্ছি। সব খরচ মিটিয়ে আমাদের পোষায় না। ধান বিক্রি করে আমরা লাভবান হচ্ছি না। নৌকা থেকে ধানের বস্তা মোকামে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: বাংলানিউজনেত্রকোনা জেলা থেকে ধান নিয়ে আসা কৃষক সান্তাজ মিয়া বলেন, প্রতি কানি জমির ধান করতে গিয়ে আমাদের আট হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ যে দাম পাচ্ছি তাতে লাভে লোকসানে সমান সমান।
কৃষক লিটন হোসেন বলেন, উৎপাদিত ফসল আমাদের ধরে রাখা সম্ভব না। জমিতেই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ ধারদেনা করে আমরা ফসল আবাদ করছি। মহাজনের ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে আমরা ফসল অল্প দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। মোকামের আড়ৎদার গোলাপ মিয়া বলেন, কৃষকরা ভাল দাম পাচ্ছেন। এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই। কৃষকরা বা ধান বিক্রেতারা উন্মুক্ত দরদামের মাধ্যমে ধান বিক্রয় করছেন। প্রতিদিন এই মোকামে বিপুল পরিমাণ ধান আসে। ধান কাটা মাত্র শুরু হয়েছে দিন যতই যাবে মোকামের ব্যস্ততাও ততই বাড়বে। আড়ৎদার জজ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ধানের আমদানি বেশি এবং বৈশাখ মাসের ভিজা ধান হওয়ায় ধান বিক্রেতারা দর কিছুটা কম পেয়ে থাকেন। আবার চালের দাম কমলে ধানের দামও কিছুটা কমে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া চাতাল মালিক সমিতির সভাপতি মো. বাবুল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, চলতি বছরে ধানের যে মূল্য দেওয়া হচ্ছে। তা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। আগে প্রতি মণ ধান তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা দরে বিক্রি হত। কিন্তু এ বছর প্রতি মণে সাড়ে পাঁচশ থেকে ছয়শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে এই মোকামে যারা ধান বিক্রয় করতে আসেন অধিকাংশই হচ্ছেন ব্যাপারী। তারা কৃষকের কাছ থেকে জমির ধান জমি থেকেই কম দামে এনে এখানে তা বিক্রি করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যাপারীরা কৃষকদের কম মূল্য দিয়ে থাকেন। কৃষকরা নানা খরচ মিটানোর তাগিদে কিছুটা কম বেশি দামে ব্যাপারীদের কাছে ধান বিক্রি করে দেয়। যদি কৃষকরা সরাসরি ধান মোকামে নিয়ে আসত তাহলে কৃষকরা লাভবান হত।
তিনি আরো জানান, বর্তমান মূল্যে ধান ক্রয় করলেও মিলমালিকরা লাভবান হতে পারবেন না। কারণ প্রতিমণ ধান থেকে প্রক্রিয়া শেষে ১৮ থেকে ২০ কেজি চাল পাওয়া যায়। বর্তমান বাজারে চালের যে দাম রয়েছে তার চেয়েও দুইএকশ টাকা কম পড়ে।
Leave a Reply